সূরা : সুরা সিজদাহ্
الٓـمّٓ ۚ
আলিফ-লাম-মিম।
تَنْزِيْلُ الْكِتٰبِ لَا رَيْبَ فِيْهِ مِنْ رَّبِّ الْعٰلَمِيْنَ
এই আল কিতাব বিশ্বজগতের প্রতিপালকের পক্ষ হ'তেই অবতীর্ণ হয়েছে, এর মধ্যে কোনো সন্দেহ নেই।
اَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرٰىهُ ۚ بَلْ هُوَ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اَتٰهُمْ مِّنْ نَّذِيْرٍ مِّنْ قَبْلِكَ لَعَلَّهُمْ يَهْتَدُوْنَ
তারা কি বলছে, সে তা মিথ্যা রচনা করেছে ? বরং তা তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হ'তে সত্য। যেনো তুমি এমন এক জাতিকে সতর্ক করে দিতে পারো, যাদের কাছে তোমার পূর্বে কোনো সতর্ককারী আসেনি, সম্ভবত তারা সঠিক পথে চলবে।
اَللّٰهُ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰي عَلَي الْعَرْشِ ؕ مَا لَكُمْ مِّنْ دُوْنِهٖ مِنْ وَّلِيٍّ وَّلَا شَفِيْعٍ ؕ اَفَلَا تَتَذَكَّرُوْنَ
(তিনিই) আল্লাহ, যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীকে আর এ দু'য়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে সে সব ছয়টি কালে সৃষ্টি করে একটি কেন্দ্রের সাথে সম্পৃক্ত করে দিয়েছেন। তিনি ছাড়া তোমাদের জন্যে অন্য কোনো অলি নেই এবং নেই কোনো সুপারিশকারী। তবে কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?
يُدَبِّرُ الْاَمْرَ مِنَ السَّمَآءِ اِلَي الْاَرْضِ ثُمَّ يَعْرُجُ اِلَيْهِ فِيْ يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهٗۤ اَلْفَ سَنَةٍ مِّمَّا تَعُدُّوْنَ
তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সব কাজের পরিচালনা ব্যবস্তা করেন। এরপর সে সব মাত্র একদিনের মধ্যেই তাঁর দিকে উত্থিত হবে। যার পরিমাণ হবে তোমাদের কাছে এক হাজার বছর, সেই হিসেব থেকে যা তোমরা গণনা করো।
ذٰلِكَ عٰلِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ ۙ
সেই অদৃশ্য ও দৃশ্য সব বিষয় সম্পর্কে মহা-সম্মানী ও পরম দয়ালু জানেন।
الَّذِيْۤ اَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهٗ وَبَدَاَ خَلْقَ الْاِنْسَانِ مِنْ طِيْنٍ ۚ যিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানুষের সৃষ্টি সূচনা করেছেন।
যিনি তাঁর প্রতিটি সৃষ্টিকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন এবং কাদামাটি থেকে মানুষের সৃষ্টি সূচনা করেছেন।
ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهٗ مِنْ سُلٰلَةٍ مِّنْ مَّآءٍ مَّهِيْنٍ ۚ
এরপর তার বংশধরকে তুচ্ছ পানির নিংড়ানো অংশ (তরল পদার্থের নির্যাস) থেকেই সৃষ্টি করেছেন।
ثُمَّ سَوّٰىهُ وَنَفَخَ فِيْهِ مِنْ رُّوْحِهٖ وَجَعَلَ لَكُمُ السَّمْعَ وَالْاَبْصَارَ وَالْاَفْـِٕدَةَ ؕ قَلِيْلًا مَّا تَشْكُرُوْنَ
এরপর তিনি তাকে সুঠাম করেছেন এবং তাতে তাঁর রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছেন। আর তিনি তোমাদের জন্যে কান, চোখ ও অন্তরসমূহ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো !
وَقَالُوْۤا ءَاِذَا ضَلَلْنَا فِي الْاَرْضِ ءَاِنَّا لَفِيْ خَلْقٍ جَدِيْدٍ ؕ بَلْ هُمْ بِلِقَآئِ رَبِّهِمْ كٰفِرُوْنَ
আর তারা বলে, আমরা যখন মাটির মধ্যে মিশে যাবো, তারপরেও কি আমরা নতুন সৃষ্টি হবো ? বরং তারা তাদের প্রতিপালকের সাক্ষাৎ সম্পর্কে অস্বীকার করছে।
قُلْ يَتَوَفّٰىكُمْ مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِيْ وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ اِلٰي رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ
তুমি বলে দাও, ‘মালাকুল মওত’ তথা মৃত্যুর জন্যে যেসব শক্তি (তাপ, চাপ, ধাক্কা ইত্যাদি) নিয়োগ করা হয়েছে, তাতেই তোমাদের মৃত্যু ঘটবে। এরপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
وَلَوْ تَرٰۤي اِذِ الْمُجْرِمُوْنَ نَاكِسُوْا رُءُوْسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ ؕ رَبَّنَاۤ اَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا اِنَّا مُوْقِنُوْنَ
আর তুমি যদি দেখতে, যখন অপরাধীরা তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের মাথাসমূহ অবনত করে বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক ! এখন আমরা দেখেছি ও শুনেছি। সুতরাং এখন আমাদেরকে আবার ফেরত পাঠিয়ে দিন, আমরা সংশোধনের কাজই করবো, নিশ্চয়ই আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী।
وَلَوْ شِئْنَا لَاٰتَيْنَا كُلَّ نَفْسٍ هُدٰىهَا وَلٰكِنْ حَقَّ الْقَوْلُ مِنِّيْ لَاَمْلَـَٔنَّ جَهَنَّمَ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ
আর আমি যদি চাইতাম, তাহলে অবশ্যই আমি প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সঠিকপথে পরিচালিত করতে পারতাম। কিন্তু আমার কথাই যে সত্যে পরিণত হবে, ‘অবশ্যই আমি দুষ্কৃতি জিনদের ও মানুষদের দিয়ে একসাথে জাহান্নামকে পূর্ণ করবো'।
فَذُوْقُوْا بِمَا نَسِيْتُمْ لِقَآءَ يَوْمِكُمْ هٰذَا ۚ اِنَّا نَسِيْنٰكُمْ وَذُوْقُوْا عَذَابَ الْخُلْدِ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
সুতরাং এখন তোমরা স্বাদ আস্বাদন করো, আজকের এই সাক্ষাৎকারের দিন যে অবশ্যই আসবে সেকথা তোমরা ভুলেই গিয়েছিলে। আমিও তোমাদেরকে ভুলে গেলাম। আর তোমরা চিরকালীন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে থাকো, তোমরা যে সব কাজ করতে তার বিনিময়ে।
اِنَّمَا يُؤْمِنُ بِاٰيٰتِنَا الَّذِيْنَ اِذَا ذُكِّرُوْا بِهَا خَرُّوْا سُجَّدًا وَّسَبَّحُوْا بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَهُمْ لَا يَسْتَكْبِرُوْنَ ٛ
নিশ্চয় তারাই তো আমার আয়াতগুলীর প্রতি ঈমান আনে, যাদেরকে এর দ্বারা যখন স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, তখন যারা পরম আনুগত্যে লুটিয়ে পড়ে এবং তাদের প্রতিপালকের প্রশংসাসহ পবিত্রতা ঘোষণা করতে থাকে। আর তারা অহংকার করে না।
تَتَجَافٰي جُنُوْبُهُمْ عَنِ الْمَضَاجِعِ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ خَوْفًا وَّطَمَعًا ۫ وَّمِمَّا رَزَقْنٰهُمْ يُنْفِقُوْنَ
তারা তাদের বিছানা ছেড়ে উঠে যায়। আর তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় ও আশা নিয়ে ডাকতে থাকে, আর আমার দেওয়া জীবিকা হ'তে তারা ব্যয় করে।
فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَّاۤ اُخْفِيَ لَهُمْ مِّنْ قُرَّةِ اَعْيُنٍ ۚ جَزَآءًۢ بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
সুতরাং কোনো ব্যক্তিই জানে না, এসব লোকদের চোখ জুড়ানোর জন্যে যা কিছু লুকিয়ে রাখা হয়েছে। তারা যে কাজ করছে তারই প্রতিদান হিসেবে।
اَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِنًا كَمَنْ كَانَ فَاسِقًا ؕؔ لَا يَسْتَوٗنَ
তবে যে ব্যক্তি মু'মিন, সে কি অমান্যকারী-ফাসিক লোকের মতোই হবে? না, তারা মোটেই সমান হতে পারে না।
اَمَّا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فَلَهُمْ جَنّٰتُ الْمَاْوٰي ۫ نُزُلًۢا بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
তাইতো যারা ঈমান এনে সংশোধনের কাজ করে, তাদের বসবাসের জন্যে ঠিকানা হবে জান্নাতসমূহ। তারা যে সব কাজ করেছে সেজন্যে আপ্যায়ণ হিসেবে।
وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَاْوٰىهُمُ النَّارُ ؕ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْۤا اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِهٖ تُكَذِّبُوْنَ
আর যারা অমান্যকারী-ফাসিক, তাদের বাসস্থান হবে আগুন। যখনই তারা সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে, তখনই তাদেরকে সেখানে ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর তাদেরকে বলা হবে, তোমরা সবাই আগুনের শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করো, যে সম্বন্ধে তোমরা তোমরা মিথ্যারোপ করতে।
وَلَنُذِيْقَنَّهُمْ مِّنَ الْعَذَابِ الْاَدْنٰي دُوْنَ الْعَذَابِ الْاَكْبَرِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُوْنَ
আর আমি অবশ্যই তাদেরকে (দুনিয়ার) কিছু হালকা শাস্তিও আস্বাদন করাবো, সেই (পরকালের) বড় কঠিন শাস্তির আগেই। সম্ভবত তারা ফিরে আসবে।
وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِاٰيٰتِ رَبِّهٖ ثُمَّ اَعْرَضَ عَنْهَا ؕ اِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِيْنَ مُنْتَقِمُوْنَ
তার চেয়ে বড় সীমালঙ্ঘনকারী আর কেই বা হতে পারে? যাকে তার প্রতিপালকের আয়াত সমূহ স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু এরপরেও সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিশ্চয়ই আমি এমন ধরনের অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ নিবো।
وَلَقَدْ اٰتَيْنَا مُوْسَي الْكِتٰبَ فَلَا تَكُنْ فِيْ مِرْيَةٍ مِّنْ لِّقَآئِهٖ وَجَعَلْنٰهُ هُدًي لِّبَنِيْۤ اِسْرَآءِيْلَ ۚ
আর নিশ্চয়ই আমি মূসাকে আল কিতাব দিয়েছি। সুতরাং তা পেয়ে কোনো রকম তুমি সন্দেহ পোষণ করবে না। আর আমিই তাকে ঈসরাঈলের সন্তানদের জন্যে পথ নির্দেশনা বানিয়েছি।
وَجَعَلْنَا مِنْهُمْ اَئِمَّةً يَّهْدُوْنَ بِاَمْرِنَا لَمَّا صَبَرُوْا ۟ؕ وَكَانُوْا بِاٰيٰتِنَا يُوْقِنُوْنَ
আমিই তাদের মধ্যে অনেককে নেতা বানিয়েছি, তারা আমার নির্দেশ অনুসারে লোকজনকে পথ দেখাতো আর ধৈর্য ধারণ করত। আর তারা আমার আয়াতগুলোর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস করতো।
اِنَّ رَبَّكَ هُوَ يَفْصِلُ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ
নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকই কিয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফায়সালা করে দিবেন, যা নিয়ে তারা তাদের নিজেদের মধ্যে মতো-বিরোধ করছে।
اَوَلَمْ يَهْدِ لَهُمْ كَمْ اَهْلَكْنَا مِنْ قَبْلِهِمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ يَمْشُوْنَ فِيْ مَسٰكِنِهِمْ ؕ اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيٰتٍ ؕ اَفَلَا يَسْمَعُوْنَ
এটাও কি তাদের জন্যে পথ প্রদর্শন করে না যে, তাদের পূর্বে (শতাব্দীর) আমি কত সংখ্যক মানবগোষ্ঠীকে ধ্বংস করে দিয়েছি। যাদের বাসভূমির মধ্যে তারা যাতায়াত করছে, নিশ্চয়ই এর মধ্যে অনেক নিদর্শনাবলী রয়েছে। তবুও কি তারা শুনবে না ?
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا نَسُوْقُ الْمَآءَ اِلَي الْاَرْضِ الْجُرُزِ فَنُخْرِجُ بِهٖ زَرْعًا تَاْكُلُ مِنْهُ اَنْعَامُهُمْ وَاَنْفُسُهُمْ ؕ اَفَلَا يُبْصِرُوْنَ ؓ
তারা কি দেখে না যে, আমিই শুকনা অনাবাদী ভূমিতে পানি প্রবাহিত করি। আর তা দিয়ে ফসল উদগত করে থাকি, যা তাদের পশুগুলো আর তারা নিজেরাও খেয়ে থাকে। তবুও কি তারা লক্ষ্য করবে না ?
وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰي هٰذَا الْفَتْحُ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِيْنَ
(মিথ্যাবাদীরা) বলছে, এই ফায়সালা কখন হবে? যদি তোমরা সত্যবাদী হয়েই থাকো !
قُلْ يَوْمَ الْفَتْحِ لَا يَنْفَعُ الَّذِيْنَ كَفَرُوْۤا اِيْمَانُهُمْ وَلَا هُمْ يُنْظَرُوْنَ
তুমি বলে দাও, বিজয়ের ফায়সালার দিন কাফিরগুলোর ঈমান আনায় কোনো উপকার দিবে না। আর তাদের অবকাশও দেওয়া হবে না।
فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَانْتَظِرْ اِنَّهُمْ مُّنْتَظِرُوْنَ
সুতরাং তুমি তাদেরকে এড়িয়ে চলো, আর তুমি অপেক্ষা করো। নিশ্চয়ই তারাও অপেক্ষা করছে।