সূরা : সুরা ইয়া-সী'ন
يٰسٓ ۚ
ইয়া-সী'ন।
تَنْزِيْلَ الْعَزِيْزِ الرَّحِيْمِ ۙ
(এই কোরআন) মহা সন্মামানীর পক্ষ হ'তে অবতীর্ণ হয়েছে, যিনি পরম দয়ালু।
لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غٰفِلُوْنَ
তুমি এমন এক জাতিকে যেন সতর্ক কর, যাদের বাপ-দাদাদেরকে সতর্ক করা হলেও, তারা একেবারেই উদাসীন হয়ে আছে।
36(6) নং আয়াতে থাকা লফজে "ما"/"মা" শব্দটির অর্থ যদি করা হয়, না /হয়নি, তাহলে এই আয়াতটি 35(24) নং আয়াতের সাথে বৈপরীত্য হয়।
لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلٰۤي اَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
তাদের মধ্যে অধিকাংশের উপরেই বিশেষ বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছে। সুতরাং তারা ঈমান আনবে না।
اِنَّا جَعَلْنَا فِيْۤ اَعْنَاقِهِمْ اَغْلٰلًا فَهِيَ اِلَي الْاَذْقَانِ فَهُمْ مُّقْمَحُوْنَ
নিশ্চয়ই আমি তাদের গর্দানে বেড়িসমূহ লাগিয়ে দিয়েছি, আর তা চিবুক পর্যন্তই জড়ানো রয়েছে, এজন্যে তারা উর্ধ্বমুখী হয়ে আছে।
وَجَعَلْنَا مِنْۢ بَيْنِ اَيْدِيْهِمْ سَدًّا وَّمِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَاَغْشَيْنٰهُمْ فَهُمْ لَا يُبْصِرُوْنَ
আমি তাদের সামনে একটি প্রাচীর, আর তাদের পিছনে একটি প্রাচীর তৈরী করে রেখেছি। তারপরে উপরের দিকটাও ঢেকে দিয়েছি। তাই তারা কিছুই দেখতে পাবে না।
وَسَوَآءٌ عَلَيْهِمْ ءَاَنْذَرْتَهُمْ اَمْ لَمْ تُنْذِرْهُمْ لَا يُؤْمِنُوْنَ
তাদেরকে তুমি সতর্ক কর কিংবা না-ই কর তাদের জন্যে সবই সমান। কিছুতেই তারা ঈমান আনবে না।
اِنَّمَا تُنْذِرُ مَنِ اتَّبَعَ الذِّكْرَ وَخَشِيَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِ ۚ فَبَشِّرْهُ بِمَغْفِرَةٍ وَّاَجْرٍ كَرِيْمٍ
তুমি তাকেই কেবল সতর্ক করবে, যে উপদেশ মেনে চলে, আর দয়াময়কে চাক্ষুষভাবে না দেখেও ভয় করে। তাকে ক্ষমা ও সম্মানিত প্রতিফলের সুসংবাদ পৌঁছে দাও।
اِنَّا نَحْنُ نُحْيِ الْمَوْتٰي وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوْا وَاٰثَارَهُمْ ؕؑ وَكُلَّ شَيْءٍ اَحْصَيْنٰهُ فِيْۤ اِمَامٍ مُّبِيْنٍ
নিশ্চয়ই আমি মৃতদেরকে জীবিত করব। আর আমি তো লিখে রেখেছি, যা তারা আগে পাঠিয়েছে, আর তাদের কীর্তিসমূহকেও (যা তারা পিছনে রেখে গেছে)। আর প্রত্যেকটি জিনিস আমি সংরক্ষণ করেছি সুস্পষ্ট একটি কিতাবের মধ্যে।
13 وَاضْرِبْ لَهُمْ مَّثَلًا اَصْحٰبَ الْقَرْيَةِ ۘ اِذْ جَآءَهَا الْمُرْسَلُوْنَ ۚ
মানুষের জন্যে একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে‘ বিশেষ জনপদের অধিবাসীদের কথা বর্ণনা কর। যখন সেখানে রাসূলগণ আসে।
اِذْ اَرْسَلْنَاۤ اِلَيْهِمُ اثْنَيْنِ فَكَذَّبُوْهُمَا فَعَزَّزْنَا بِثَالِثٍ فَقَالُوْۤا اِنَّاۤ اِلَيْكُمْ مُّرْسَلُوْنَ
তাদের কাছে আমি যখন দু'জন রাসূলকে পাঠাই। তখন তারা সেই দু'জনকেও মিথ্যাবাদী বলে। তখন আমি শক্তিশালী করার জন্যে তৃতীয় আরও একজনকে পাঠাই। অতঃপর তারা বলে, নিশ্চয় আমরা তোমাদের প্রতি রাসূল হিসেবে এসেছি।
قَالُوْا مَاۤ اَنْتُمْ اِلَّا بَشَرٌ مِّثْلُنَا ۙ وَمَاۤ اَنْزَلَ الرَّحْمٰنُ مِنْ شَيْءٍ ۙ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا تَكْذِبُوْنَ
তারা বলে, না, তোমরা তো আমাদেরই মতো মানুষ। আর দয়াময় তো তোমাদের কাছে কোন কিছুই অবতীর্ণ করেননি। না তোমরা শুধু মিথ্যা কথাই বলে যাচ্ছো।
قَالُوْا رَبُّنَا يَعْلَمُ اِنَّاۤ اِلَيْكُمْ لَمُرْسَلُوْنَ
তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক জানেন যে, আমরা তোমাদের কাছেই রাসূল হিসেবে এসেছি।
وَمَا عَلَيْنَاۤ اِلَّا الْبَلٰغُ الْمُبِيْنُ
আর আমাদের দায়িত্ব শুধু পরিস্কারভাবে বার্তা পৌঁছে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নয়।
قَالُوْۤا اِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ ۚ لَئِنْ لَّمْ تَنْتَهُوْا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُمْ مِّنَّا عَذَابٌ اَلِيْمٌ
তারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি। তোমরা যদি বিরত না হও, তাহলে আমরা তোমাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করবোই। আর অবশ্যই আমাদের পক্ষ হ'তে তোমাদেরকে নিদারুণ শাস্তি স্পর্শ করবে।
*36(18) নং আয়াত মাধ্যমে নবী-রাসুলদের হুমকি দেওয়ার ব্যাপারে 26(167),27(26,54-56)29(24)...।
قَالُوْا طَآئِرُكُمْ مَّعَكُمْ ؕ اَئِنْ ذُكِّرْتُمْ ؕ بَلْ اَنْتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُوْنَ
রাসূলগণ বলে, তোমাদের অমঙ্গলের কারণ তোমাদের সাথেই। তোমাদের উপদেশ দেওয়া হয়েছে বলেই কি এসব বলছ? বরং তোমরাই তো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়।
وَجَآءَ مِنْ اَقْصَا الْمَدِيْنَةِ رَجُلٌ يَّسْعٰي قَالَ يٰقَوْمِ اتَّبِعُوا الْمُرْسَلِيْنَ ۙ
আর মদীনার (মাসজিদে) আকসা হতে একটি লোক দৌড়ে এসে বলে, হে আমার জাতি ! তোমরা সবাই রাসূলদের অনুসরণ কর।
اتَّبِعُوْا مَنْ لَّا يَسْـَٔلُكُمْ اَجْرًا وَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ
তোমরা তারই অনুসরণ কর, যে তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চায় না, আর তারা সঠিকপথ প্রাপ্ত।
وَمَا لِيَ لَاۤ اَعْبُدُ الَّذِيْ فَطَرَنِيْ وَاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
আমার কি হয়েছে ! যাতে আমি তাঁর দাসত্ব করব না, যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আর তাঁরই দিকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।
ءَاَتَّخِذُ مِنْ دُوْنِهٖۤ اٰلِهَةً اِنْ يُّرِدْنِ الرَّحْمٰنُ بِضُرٍّ لَّا تُغْنِ عَنِّيْ شَفَاعَتُهُمْ شَيْئًا وَّلَا يُنْقِذُوْنِ ۚ
আমি কি তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে বিধানদাতা হিসেবে গ্রহণ করবো ? অথচ দয়াময় যদি আমার কোন ক্ষতি করতে চান, তাহলে তাদের সুপারিশ তো আমার জন্যে কিছুমাত্র কাজে আসবে না। আর তারা আমাকে উদ্ধারও করতে পারবে না।
اِنِّيْۤ اِذًا لَّفِيْ ضَلٰلٍ مُّبِيْنٍ
আমি যদি তাই করি, তাহলে নিশ্চয়ই আমি সুস্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যেই পতিত হব।
اِنِّيْۤ اٰمَنْتُ بِرَبِّكُمْ فَاسْمَعُوْنِ ؕ
নিশ্চয় আমি তোমাদের প্রতিপালকের প্রতি ঈমান এনেছি, সুতরাং তোমরা সবাই আমার কথা শোনো ও মানো।
قِيْلَ ادْخُلِ الْجَنَّةَ ؕ قَالَ يٰلَيْتَ قَوْمِيْ يَعْلَمُوْنَ ۙ
বলা হবে তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলবে, হায় ! আমার জাতি যদি জানতে পারত !
*36(26) নং আয়াতের ব্যাখ্যায় 71(25)...।
بِمَا غَفَرَ لِيْ رَبِّيْ وَجَعَلَنِيْ مِنَ الْمُكْرَمِيْنَ
আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন, আর আমাকে সম্মানিত লোকদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
وَمَاۤ اَنْزَلْنَا عَلٰي قَوْمِهٖ مِنْۢ بَعْدِهٖ مِنْ جُنْدٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَمَا كُنَّا مُنْزِلِيْنَ
এর পরে আমি তার সেই জাতির উপরে আকাশ থেকে কোন সৈন্যবাহিনী অবতীর্ণ করিনি। আর না আমি অবতীর্ণকারী।
اِنْ كَانَتْ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً فَاِذَا هُمْ خٰمِدُوْنَ
ব্যাস, একটি মাত্র মহাগর্জন, তখনই তারা নিথর নিস্তব্ধ হয়ে যাবে।
يٰحَسْرَةً عَلَي الْعِبَادِ ۚؑ مَا يَاْتِيْهِمْ مِّنْ رَّسُوْلٍ اِلَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِءُوْنَ
হায় আফসোস ! আমার দাসদের উপরে। তাদের কাছে এমন কোন রাসূল আসেনি, যাদের সাথে তারা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেনি ।
اَلَمْ يَرَوْا كَمْ اَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّنَ الْقُرُوْنِ اَنَّهُمْ اِلَيْهِمْ لَا يَرْجِعُوْنَ ؕ
মানুষেরা কি দেখছে না যে, আমি তাদের পূর্বেকার মানবগোষ্ঠীর মধ্য হতে কতো জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছি। তারা যে তাদের মধ্যে আর ফিরে আসছে না।
وَاِنْ كُلٌّ لَّمَّا جَمِيْعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُوْنَ
অথচ তাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে দল বেঁধে পাকড়াও হয়ে আমার কাছে উপস্থিত হবে না।
وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الْاَرْضُ الْمَيْتَةُ ۚۖ اَحْيَيْنٰهَا وَاَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَاْكُلُوْنَ
মানুষের জন্যে একটি নিদর্শন হচ্ছে, শুকনা-নিষ্প্রাণ মাটি। আমি তাকে জীবিত করে দিই। আর তা থেকে আমি শাক-সবজী, বীজ (ধান, গম ইত্যাদি) বের করি। অতঃপর তা থেকে তারা খায়।
وَجَعَلْنَا فِيْهَا جَنّٰتٍ مِّنْ نَّخِيْلٍ وَّاَعْنَابٍ وَّفَجَّرْنَا فِيْهَا مِنَ الْعُيُوْنِ ۙ
আমি সেখানে খেজুর ও আংগুরের জান্নাত-বাগানসমূহ বানিয়েছি। তাতে আমি ঝর্ণা সমূহ বইয়ে দিয়েছি।
لِيَاْكُلُوْا مِنْ ثَمَرِهٖ ۙ وَمَا عَمِلَتْهُ اَيْدِيْهِمْ ؕ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
যেনো তারা সেখানকার ফল-মূল খেতে পারে। অথচ তাদের হাত গুলো এসবের কিছুই সৃষ্টি করেনি। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না?
سُبْحٰنَ الَّذِيْ خَلَقَ الْاَزْوَاجَ كُلَّهَا مِمَّا تُنْۢبِتُ الْاَرْضُ وَمِنْ اَنْفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُوْنَ
তিনি তো পবিত্র মহান, যিনি জোড়ায় জোড়ায় সব কিছুকেই সৃষ্টি করেছেন, যা কিছু মাটিতে জন্মায়, আর তাদের নিজেদের মধ্য হতেও, আর তাহ'তেও যা তারা জানে না।
وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الَّيْلُ ۚۖ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَاِذَا هُمْ مُّظْلِمُوْنَ ۙ
আর মানুষের জন্যে রাতও একটি নিদর্শন। তার উপর থেকে আমি দিনকে সরিয়ে দেই, অতঃপর তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায়।
وَالشَّمْسُ تَجْرِيْ لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ؕ ذٰلِكَ تَقْدِيْرُ الْعَزِيْزِ الْعَلِيْمِ ؕ
আর সূর্য সে তো নিজের নির্দিষ্ট গন্ডির মধ্যে চলমান অবস্থায় রয়েছে। এটা মহা-সম্মানী ও মহাজ্ঞানীর নিয়ন্ত্রণ।
وَالْقَمَرَ قَدَّرْنٰهُ مَنَازِلَ حَتّٰي عَادَ كَالْعُرْجُوْنِ الْقَدِيْمِ
আর চাঁদকেও তো আমি স্তর ভাগ করে দিয়েছি, এমন কি সে পুরানো খেজুর শাখার মতো অবস্থায় ফিরে আসে।
لَا الشَّمْسُ يَنْۢبَغِيْ لَهَاۤ اَنْ تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا الَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ ؕ وَكُلٌّ فِيْ فَلَكٍ يَّسْبَحُوْنَ
সূর্যের তেমন সামর্থ নেই যে চাঁদকে ধরতে পারবে। আর রাত তো দিনের আগে আসতে পারে না। প্রত্যেকেই নিজ-নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটছে।
*সূর্য ও চাঁদের চলার ক্ষেত্রেও "يجري" শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যার মূল রোট হচ্ছে "جري" যার অর্থ হচ্ছে পরিভ্রমণ করা/আবর্তন করা/চলা/প্রবাহিত হওয়া /বয়ে চলা...ইত্যাদি ।
وَاٰيَةٌ لَّهُمْ اَنَّا حَمَلْنَا ذُرِّيَّتَهُمْ فِي الْفُلْكِ الْمَشْحُوْنِ ۙ
তাদের জন্যে এও একটি নিদর্শন, আমি তাদের বংশধরদেরকে বোঝাই জাহাজে আরোহণ করাই।
وَخَلَقْنَا لَهُمْ مِّنْ مِّثْلِهٖ مَا يَرْكَبُوْنَ
আর তাদের জন্যে জাহাজের অনুরূপ এমন জিনিস সৃষ্টি করেছি, যাতে তারা চড়ে থাকে।
وَاِنْ نَّشَاْ نُغْرِقْهُمْ فَلَا صَرِيْخَ لَهُمْ وَلَا هُمْ يُنْقَذُوْنَ ۙ
আর আমি যদি ইচ্ছা করি, তাহলে তাদেরকে ডুবিয়ে দিতে পারি, তখন আর তাদের ডাকে সাড়াদানকারী কেউ থাকবে না, আর তারা উদ্ধারও পাবে না।
اِلَّا رَحْمَةً مِّنَّا وَمَتَاعًا اِلٰي حِيْنٍ
তবে আমার অনুগ্রহ ব্যতীত। অবশ্য একটা নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত তাদেরকে সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّقُوْا مَا بَيْنَ اَيْدِيْكُمْ وَمَا خَلْفَكُمْ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ
আর যখনই তাদেরকে বলা হয়, তোমরা ভয় করো, যা তোমাদের সামনে রয়েছে এবং যা তোমাদের পিছনে রয়েছে। যাতে তোমাদের উপরে অনুগ্রহ করা যায়।
وَمَا تَاْتِيْهِمْ مِّنْ اٰيَةٍ مِّنْ اٰيٰتِ رَبِّهِمْ اِلَّا كَانُوْا عَنْهَا مُعْرِضِيْنَ
আর তাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহের মধ্য হ'তে এমন কোনো আয়াত তাদের কাছে পৌঁছায় না, যা থেকে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় না।
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمْ اَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّٰهُ ۙ قَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْۤا اَنُطْعِمُ مَنْ لَّوْ يَشَآءُ اللّٰهُ اَطْعَمَهٗۤ ۖ اِنْ اَنْتُمْ اِلَّا فِيْ ضَلٰلٍ مُّبِيْنٍ
আবার যখনই তাদেরকে বলা হয়, তোমরা সবাই ব্যয় কর, আল্লাহ তোমাদেরকে যে জীবিকা দান করেছেন তা থেকে। তখন কিন্তু আয়াত অমান্যকারী কাফিরগুলো মুমিনদেরকে লক্ষ্য করে বলে, আমরা কি তেমন লোকদেরকে খাওয়াবো? যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করলে খাওয়াতে পারেন। তোমরা তো স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যেই রয়েছো।
وَيَقُوْلُوْنَ مَتٰي هٰذَا الْوَعْدُ اِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِيْنَ
আর তারা বলে, এই প্রতিশ্রুতি কখন পূর্ণ হবে, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়েই থাকো।
مَا يَنْظُرُوْنَ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً تَاْخُذُهُمْ وَهُمْ يَخِصِّمُوْنَ
তারা শুধু একটিমাত্র মহাগর্জনের জন্যই অপেক্ষা করছে যা তাদেরকে এসে পাকড়াও করবে, আর তারা তখন নিজেদের মধ্যে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকবে।
فَلَا يَسْتَطِيْعُوْنَ تَوْصِيَةً وَّلَاۤ اِلٰۤي اَهْلِهِمْ يَرْجِعُوْنَ
সুতরাং তারা ওছিয়াত করারও অবকাশ পাবে না, আর তারা নিজেদের পরিবারের লোকজনের কাছেও ফিরে আসতে পারবে না।
وَنُفِخَ فِي الصُّوْرِ فَاِذَا هُمْ مِّنَ الْاَجْدَاثِ اِلٰي رَبِّهِمْ يَنْسِلُوْنَ
আর যখন নতুন আকৃতি দেওয়া হবে, তখন তারা আজদাছ-পুরাতন দেহ ছেড়ে বেরিয়ে খুব তাড়াতাড়ি করেই তাদের প্রতিপালকের দিকে ছুটে আসবে।
قَالُوْا يٰوَيْلَنَا مَنْۢ بَعَثَنَا مِنْ مَّرْقَدِنَا ۘ هٰذَا مَا وَعَدَ الرَّحْمٰنُ وَصَدَقَ الْمُرْسَلُوْنَ
তখন তারা বলবে, হায় দূর্ভাগ্য আমাদের ! আমাদেরকে মারকদ-নিদ্রাস্থল থেকে কে উঠিয়ে দিল ! এটা তো তাই, যার প্রতিশ্রুতি দয়াময় দিয়েছিলেন , আর রাসূলগণ সত্যই বলেছিলেন।
اِنْ كَانَتْ اِلَّا صَيْحَةً وَّاحِدَةً فَاِذَا هُمْ جَمِيْعٌ لَّدَيْنَا مُحْضَرُوْنَ
ব্যাস, শুধু একটি মাত্র মহাগর্জন, অতঃপর তখনই তাদের সকলকেই আমার কাছে উপস্হিত করা হবে।
فَالْيَوْمَ لَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًا وَّلَا تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ
অতঃপর সেদিন কারোর সাথে কিছুমাত্র অবিচার করা হবে না। আর তোমাদেরকে এমন কোনো প্রতিফল দেওয়া হবে না, তবে এ ব্যতীত তোমরা যা কিছু করেছ।
اِنَّ اَصْحٰبَ الْجَنَّةِ الْيَوْمَ فِيْ شُغُلٍ فٰكِهُوْنَ ۚ
নিশ্চয়ই জান্নাতের অধিবাসীরা সেদিন আনন্দে মশগুল থাকবে।
هُمْ وَاَزْوَاجُهُمْ فِيْ ظِلٰلٍ عَلَي الْاَرَآئِكِ مُتَّكِـُٔوْنَ
তারা ও তাদের সঙ্গীগণ ঘন ছায়াতলে সুসজ্জিত আসনের উপরে হেলান দিয়ে বসে থাকবে।
لَهُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ وَّلَهُمْ مَّا يَدَّعُوْنَ ۚۖ
তাদের জন্যে সেখানে ফল-মূল রয়েছে, আর তাও রয়েছে তাদের জন্যে, যাকিছু তারা চাইবে।
سَلٰمٌ ۟ قَوْلًا مِّنْ رَّبٍّ رَّحِيْمٍ
পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ হ'তে বলা হবে সালাম।
وَامْتَازُوا الْيَوْمَ اَيُّهَا الْمُجْرِمُوْنَ
আর বলা হবে 'হে অপরাধীগণ, আজকে তোমরা আলাদা হয়ে যাও।
اَلَمْ اَعْهَدْ اِلَيْكُمْ يٰبَنِيْۤ اٰدَمَ اَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطٰنَ ۚ اِنَّهٗ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ ۙ
হে মুনুষ্য সন্তান ! আমি কি তোমাদের প্রতি এ মর্মে নির্দেশ দিই নি যে, তোমরা শয়তানের দাসত্ব করবে না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের জন্যে প্রকাশ্য শত্রু।
وَّاَنِ اعْبُدُوْنِيْ ؕؔ هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ
আর এও যে, তোমরা আমারই দাসত্ব করবে, এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত পথ।
وَلَقَدْ اَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلًّا كَثِيْرًا ؕ اَفَلَمْ تَكُوْنُوْا تَعْقِلُوْنَ
অথচ শয়তান যে তোমাদের মধ্যে অধিকাংশদেরকে বিভ্রান্ত করে ফেলেছে। তোমরা কি কিছুই বুঝবে না ?
هٰذِهٖ جَهَنَّمُ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ
এই সেই জাহান্নাম, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদের সাথে দেওয়া হয়েছিল।
اِصْلَوْهَا الْيَوْمَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُوْنَ
আজকে সেখানে পৌঁছে যাও, তারই বিনিময়ে যা তোমরা অস্বীকার করতে।
اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰۤي اَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَاۤ اَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ اَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ
আজকে আমি তাদের মুখগুলোর উপরে সীল করে দিবো। আর তাদের হাতগুলো আমার সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা গুলো সাক্ষী দিবে, তারা যা কিছু কামাই করেছে, সে বিষয়ে।
وَلَوْ نَشَآءُ لَطَمَسْنَا عَلٰۤي اَعْيُنِهِمْ فَاسْتَبَقُوا الصِّرَاطَ فَاَنّٰي يُبْصِرُوْنَ
আমি যদি ইচ্ছা করি, তাহলে তাদের চোখগুলো অন্ধ করে দিতে পারি। তারপরে পথ খুঁজতে যতোই ব্যস্ত হোক না কেনো ! তখন কোথাও কি কিছু দেখতে সক্ষম হবে ?
وَلَوْ نَشَآءُ لَمَسَخْنٰهُمْ عَلٰي مَكَانَتِهِمْ فَمَا اسْتَطَاعُوْا مُضِيًّا وَّلَا يَرْجِعُوْنَ
আমি যদি ইচ্ছা করি, তাহলে তারা যেখানে আছে সেখানে সেই অবস্থাতেই তাদের (দৃষ্টিশক্তি) নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারি। তারপরে তো আর না সামনে এগুতে পারবে, না পিছিয়ে আসতে পারবে।
وَمَنْ نُّعَمِّرْهُ نُنَكِّسْهُ فِي الْخَلْقِ ؕ اَفَلَا يَعْقِلُوْنَ
আমি যাকে বুড়ো বানিয়ে দিই, তার আকৃতি কুঁজো করে থাকি। তাহলে তারা কি কিছু বুঝতে সক্ষম হবে?
وَمَا عَلَّمْنٰهُ الشِّعْرَ وَمَا يَنْۢبَغِيْ لَهٗ ؕ اِنْ هُوَ اِلَّا ذِكْرٌ وَّقُرْاٰنٌ مُّبِيْنٌ ۙ
আমি তো রাসূলকে কবিতা শিখাইনি, আর এটা তার জন্যে শোভাও পায় না। এ তো কেবল একটি সংবিধান আর সুস্পষ্ট কুরআন।
لِّيُنْذِرَ مَنْ كَانَ حَيًّا وَّيَحِقَّ الْقَوْلُ عَلَي الْكٰفِرِيْنَ
যে ব্যক্তি বেঁচে থাকবে (পাপ-কর্ম থেকে) তাকেই সতর্ক করার জন্যে আর কাফিরদের বিরুদ্ধে বিশেষ বাণীর অভিযোগ সুপ্রমাণ করার জন্যেই
اَوَلَمْ يَرَوْا اَنَّا خَلَقْنَا لَهُمْ مِّمَّا عَمِلَتْ اَيْدِيْنَاۤ اَنْعَامًا فَهُمْ لَهَا مٰلِكُوْنَ
তাহলে তারা কি দেখে না ! যে, আমিই তাদের জন্যে সৃষ্টি করেছি নিজের হাতে গড়া চারপেয়ে জীব-জন্তু। এখন তারাই সেগুলোর মালিক।
وَذَلَّلْنٰهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوْبُهُمْ وَمِنْهَا يَاْكُلُوْنَ
সেগুলোকে তাদের জন্যেই অনুগত করে দিয়েছি। তারপরেই তো তারা সেগুলোর মধ্যে কিছুটা বাহন হিসেবে ব্যবহার করে। আবার কোনোটাকে তারা খেয়েও থাকে।
وَلَهُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ وَمَشَارِبُ ؕ اَفَلَا يَشْكُرُوْنَ
তাদের জন্যই তো তাতে অনেক উপকার ও পান করার বস্তু (দুধ) রয়েছে। তবুও কি তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে না।
وَاتَّخَذُوْا مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ اٰلِهَةً لَّعَلَّهُمْ يُنْصَرُوْنَ ؕ
অথচ তারাই তো আল্লাহকে বাদ দিয়ে বিধানদাতা হিসেবে অন্য কাউকে গ্রহণ করেছে, হয়তো তাদেরকে সাহায্য করবে।
لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ نَصْرَهُمْ ۙ وَهُمْ لَهُمْ جُنْدٌ مُّحْضَرُوْنَ
কিন্তু তারা (ধর্মগুরু পীর- মোল্লারা) যে এদের কোনো সাহায্যই করতে পারে না। বরং তারাই যে তাদের নিজেদের সাহায্যের জন্যে সৈন্যবাহিনী গঠন করে।
فَلَا يَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْ ۘ اِنَّا نَعْلَمُ مَا يُسِرُّوْنَ وَمَا يُعْلِنُوْنَ
তুমি তাদের কথায় বিষন্ন হবে না, আমি খুব জানি তারা যা কিছু গোপন করছে, আর যা কিছু প্রকাশ করছে।
اَوَلَمْ يَرَ الْاِنْسَانُ اَنَّا خَلَقْنٰهُ مِنْ نُّطْفَةٍ فَاِذَا هُوَ خَصِيْمٌ مُّبِيْنٌ
মানুষ কি দেখে নি যে, আমি তাকে সৃষ্টি করেছি একটি ফোটার কিছু অংশ থেকে। তারপরেই সে প্রকাশ্য ঝগড়াকারী সেজে বসে।
وَضَرَبَ لَنَا مَثَلًا وَّنَسِيَ خَلْقَهٗ ؕ قَالَ مَنْ يُّحْيِ الْعِظَامَ وَهِيَ رَمِيْمٌ
আর আমার জন্যে একটা উপমা পেশ করছে, আর নিজের সৃষ্টির কথা ভুলেই থাকছে। বলেই ফেলে হাড়গুলো যখন গলে যাবে তখন কে তাকে জীবিত করবে ?
قُلْ يُحْيِيْهَا الَّذِيْۤ اَنْشَاَهَاۤ اَوَّلَ مَرَّةٍ ؕ وَهُوَ بِكُلِّ خَلْقٍ عَلِيْمُۨ ۙ
তুমি বলে দাও, তাতে প্রাণ দিবেন তিনিই, যিনি প্রথম বার এগুলোকে সৃষ্টি করেছেন, আর তিনিই তাঁর সৃষ্টির সব কিছুর সম্পর্কে খুব জানেন।
الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الشَّجَرِ الْاَخْضَرِ نَارًا فَاِذَاۤ اَنْتُمْ مِّنْهُ تُوْقِدُوْنَ
যিনি তোমাদের জন্যে সবুজ গাছ থেকে আগুন সৃষ্টি করেছেন, যা থেকে এখন তোমরা জ্বালিয়ে থাকো।
اَوَلَيْسَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ بِقٰدِرٍ عَلٰۤي اَنْ يَّخْلُقَ مِثْلَهُمْ ؕ بَلٰي وَهُوَ الْخَلّٰقُ الْعَلِيْمُ
যিনি আকাশসমূহ ও পৃথিবীকে সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি এরকম আরো জিনিস সৃষ্টি করতে সক্ষম নন ? হ্যাঁ নিশ্চয়ই সক্ষম ! আর তিনিই হলেন মহাস্রষ্টা, মহাজ্ঞানী।
اِنَّمَاۤ اَمْرُهٗۤ اِذَاۤ اَرَادَ شَيْئًا اَنْ يَّقُوْلَ لَهٗ كُنْ فَيَكُوْنُ
কেবল তাঁর কাজ হচ্ছে এই যে, তিনি যখন কিছু করতে ইচ্ছে করেন, তখন শুধু বলেন হও। আর তা হতেই চলে যায়।
فَسُبْحٰنَ الَّذِيْ بِيَدِهٖ مَلَكُوْتُ كُلِّ شَيْءٍ وَّاِلَيْهِ تُرْجَعُوْنَ
অতএব পবিত্র মহান তিনি, যার হাতে রয়েছে সার্বভৌম সব জিনিসের ক্ষমতা। আর তাঁরই দিকে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে।